উম্মাহর ঐক্য (পর্ব-১, ঐক্যের গুরুত্ব)
মুসলিম উম্মাহ আজ এক গভীর সংকটের মধ্যে নিমজ্জিত, সকল মুসলমান একই বিষয় অর্জন করতে চাইলেও তাঁরা আজ এক হতে পারছেনা, তাই কাঙ্খিত বিষয়ও অর্জিত হচ্ছেনা। তাই আজ মুসলমানদের জন্য “ঐক্য” সবচেয়ে আকাঙ্খিত বিষয়। যেই ঐক্যের কারণে মুসলমানদের রয়েছে বীরত্বগাথা ইতিহাস সেই ঐক্য আজ কেন এত অধরা! রাসুল সাল্লালাহু আলাইহি অয়া সাল্লাম এর পথ অনুসরণ করে সালাফরা যেই ঐক্য সহজেই ধরে রেখেছিলেন সেই ঐক্যই কেন আমাদের জন্য এত কঠিন। ধারাবাহিক এই প্রবন্ধে আমরা ঐক্য, ঐক্যের গুরুত্ব এবং এর পথ-পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোছনা করবো ইনশাআল্লাহ।
ঐক্য ও সংহতি মুসলিম জীবনের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাওহীদ এবং রিসালাতের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের পর মুমিনদেরকে যে বিষয়ে সবচাইতে বেশি তাগিদ দেওয়া হয়েছে তা হলো ঐক্য, আর ঐক্য কায়েমের পথও প্রকৃতপক্ষে এটাই অর্থাৎ তাওহীদ ও রিসালাত। ঐক্য এমন এক ফরজ যার আবশ্যিকতা সালাত, সিয়াম সহ অন্যান্য ফরজের চাইতে কোন অংশে কম নয়।
মহান আলাহ তায়ালা বলেনঃ
إنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ – وَتَقَطَّعُوا أَمْرَهُمْ بَيْنَهُمْ كُلٌّ إِلَيْنَا رَاجِعُونَ
নিশ্চিত জেনো, এই তোমাদের উম্মাহ, এক উম্মাহ এবং আমি তোমাদের রব। সুতরাং আমার ইবাদত কর। কিন্তু তারা নিজেদের দ্বীনকে নিজেদের মাঝে টুকরা টুকরা করে ফেলেছে। (তবে) সকলেই আমার কাছে ফিরে আসবে।(সূরাতুল আম্বিয়া: ৯২-৯৩)।
মুসলিম উম্মাহ ইসলামি শরীয়ত এবং তাঁর বিধি-বিধানের বিষয়ে একাত্মতা পোষণ করেছে, আর এটিই একমাত্র রশি যা আঁকড়ে ধরে আমরা মহান আল্লাহ তায়ালার একত্ববাদের ঘোষণা দেই। ঐক্য এমন এক ফরজ যা মুসলমানদের সামগ্রিক জীবনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। দ্বীনের অন্যান্য ফরজ বিধান সমূহ মুসলমানদের অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে, আর ঐক্য মুসলিম উম্মাহকে পরিশুদ্ধ করার কাজ করে। অন্তর পরিশুদ্ধের পাশাপাশি যদি উম্মাহ পরিশুদ্ধ হয় তাহলে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা এবং শক্তি অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। আর অন্যান্য জাতির নিকট সঠিক দ্বীনের দাওয়াত পৌছিয়ে দেওয়া আরো বেশি সহজ হবে।
বর্তমান সময়ে আমরা দেখি অনেকেই দ্বীনের জন্য কাজ করছে ঐক্যের তাগিদ এবং বিভক্তিকে প্রত্যাখ্যান করা ছাড়া, তাতে কিছু লাভ হলেও সামগ্রিকভাবে আমরা পিছিয়ে পড়ছি। দ্বীনের জন্য কাজ করার ক্ষেত্রে একত্রিত হওয়া প্রয়োজন। দ্বীনের বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আমাদের ভিন্নমত থাকতেই পারে, কিন্তু ভিন্নমত কখনোই বিভাজন ও ঘৃণাকে সমর্থন করেনা। দ্বীন প্রতিষ্ঠার গুরুত্বের চাইতে ঐক্য প্রতিষ্ঠার গুরুত্ব কোন অংশে কম নয়, মুলত দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য সবার আগে মুসলমানদের মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা জরুরী। তাইতো মহান আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে দুটোকে পাশাপাশি উল্লেখ করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
شَرَعَ لَکُمۡ مِّنَ الدِّیۡنِ مَا وَصّٰی بِهٖ نُوۡحًا وَّ الَّذِیۡۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ وَ مَا وَصَّیۡنَا بِهٖۤ اِبۡرٰهِیۡمَ وَ مُوۡسٰی وَ عِیۡسٰۤی اَنۡ اَقِیۡمُوا الدِّیۡنَ وَ لَا تَتَفَرَّقُوۡا فِیۡهِ ؕ کَبُرَ عَلَی الۡمُشۡرِکِیۡنَ مَا تَدۡعُوۡهُمۡ اِلَیۡهِ ؕ اَللّٰهُ یَجۡتَبِیۡۤ اِلَیۡهِ مَنۡ یَّشَآءُ وَ یَهۡدِیۡۤ اِلَیۡهِ مَنۡ یُّنِیۡبُ.
তিনি তোমাদের জন্য দীন বিধিবদ্ধ করে দিয়েছেন; যে বিষয়ে তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর আমি তোমার কাছে যে ওহী পাঠিয়েছি এবং ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে যে নির্দেশ দিয়েছিলাম তা হল, তোমরা দীন কায়েম করবে এবং এতে বিচ্ছিন্ন হবে না। তুমি মুশরিকদেরকে যেদিকে আহবান করছ তা তাদের কাছে কঠিন মনে হয়; আল্লাহ যাকে চান তার দিকে নিয়ে আসেন। আর যে তাঁর অভিমুখী হয় তাকে তিনি হিদায়াত দান করেন। (সুরা আশ-শূরা ৪২)।
যেমনিভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠা ফরজ ঠিক তেমনিভাবে বিভিন্ন দলে বিভক্ত না হওয়াও ফরজ। দলে দলে বিভক্ত হলে মুসলমানগণ দুর্বল হয়ে পড়বে, তাদের মধ্যে অজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে আর মহান আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে দূরে সরে যাবে। কারন আল্লাহ তায়ালাতো মানুষকে পৃথক হওয়ার জন্য সৃষ্টি করেননাই, বরং তিনি সৃষ্টি করেছেন এক জাতিতে পরিণত হওয়ার জন্য। সুতরাং যাদের উপরে আল্লাহ তায়ালা রহমত করেন তাঁরা সত্যের উপর একত্রিত হয়, এক জাতিতে পরিণত হয় এবং তাকওয়ার উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে একই দিকে আহবান করে। মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ لَا تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ بَعۡدَ اِصۡلَاحِهَا وَ ادۡعُوۡهُ خَوۡفًا وَّ طَمَعًا ؕ اِنَّ رَحۡمَتَ اللّٰهِ قَرِیۡبٌ مِّنَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ
দুনিয়ায় শান্তি শৃংখলা স্থাপনের পর বিপর্যয় ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করনা, আল্লাহকে ভয়-ভীতি ও আশা আকাংখার সাথে ডাক, নিঃসন্দেহে আল্লাহর রাহমাত সৎকর্মশীলদের অতি সন্নিকটে। (সুরা আল আ’রাফঃ ৫৬)।
যতদিন মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা হবেনা ততদিন ইসলামের শত্রুরা নিশ্চিন্ত, তারা মুসলমানদের উপর রাজ করে চলবেই, হাতের ইশারায় মুসলিম শাসকদের নাচাবে আর গোপনে শয়তানের সাথে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসবে। তাই ঐক্য জরুরী, ঐক্য গুরুত্বপূর্ণ আর ঐক্যই সমাধান।