মনস্তাত্ত্বিক এবং সামাজিক সমস্যাবলী

মানুষ কেন সমাজের অধিকাংশ কুসংস্কার মেনে নেয়!

সমাজ

কুসংস্কার হলো মানুষের বানানো সমাজে প্রচলিত ভিত্তিহীন কিছু বিশ্বাস ও নিয়ম নীতি। ইসলাম সমাজ থেকে যে অন্ধকার দিক গুলো দূর করতে চায় তার মধ্যে কুসংস্কার অন্যতম। অন্যভাবে বলা সমাজের এমন কিছু প্রচলিত বিশ্বাস যা ইসলামী শরীয়ত সমর্থন করেনা তাই কুসংস্কার। কুসংস্কার ছোট বা বড় যাই হোক না কেন, সমাজে দ্বীন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এগুলো অন্যতম বাধা হিসেবে কাজ করে। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠার মূল ভিত্তি যেমন সালাত, জিহাদসহ মহান আল্লাহ তায়ালা কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য বিধানাবলী। ঠিক তেমনি শয়তানী সমাজ প্রতিষ্ঠার অন্যতম মূল ভিত্তি হচ্ছে এই কুসংস্কার। বর্তমান সমাজ ব্যাবস্থা বা সামাজিক অবস্থার দিকে তাকালে দেখা যায় প্রায় সব সমাজ এবং অধিকাংশ পরিবার কুসংস্কারাচ্ছন্ন। কেউ মনে মনে অপছন্দ করলেও যেন বলছেনা, কুসংস্কারকেই যেন সত্য হিসেবে গ্রহণ করেছে সবাই।

কুসংস্কারের ব্যাপারে কোরআন মাজীদের বিভিন্ন জায়গায় আলোচনা এসেছে;

তারা বলল, আমরা তো তোমাকে এবং তোমার সঙ্গীদের অশুভ মনে করি। (সুরা নামল: ৪৭) ।

যখন তাদের সুখের দিন আসত, তখন বলত, এটা তো আমাদের প্রাপ্য ছিল। আর যখন কোনো বিপদ আসত, তখন তারা মূসা ও তাঁর সঙ্গীদের অশুভ সাব্যস্ত করত। (সূরা আরাফ: ১৭১)।

তাদের (মুনাফিকদের) যদি কোনো কল্যাণ লাভ হয়, তবে বলে যে এটা আল্লাহর পক্ষ হতে। পক্ষান্তরে যদি তাদের মন্দ কিছু ঘটে, তবে (হে নবী) তারা বলে এ মন্দ ব্যাপারটি আপনার কারণেই ঘটেছে। বলে দাও সব কিছুই আল্লাহর পক্ষ হতে ঘটে। ওই সব লোকের হলো কী যে তারা কোনো কিছু বোঝার চেষ্টা করে না? (সুরা নিসা : ৭৮)।

কুসংস্কারের অন্যতম বড় ধোঁকা হচ্ছে অধিকাংশ কুসংস্কারই বাহ্যিক দিক থেকে কুসংস্কার বা শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক মনে হয়না। সমাজের অধিকাংশ মানুষ কুসংস্কারকে মেনে নেয় পর্যাপ্ত দ্বীনি জ্ঞানের অভাবে, অর্থাৎ সঠিক ইলম না থাকায় মানুষ এই ভিত্তিহীন বিশ্বাস এবং নিয়মনীতি গুলোকে দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করেনা, বরং কিছু ক্ষেত্রে এগুলোকে দ্বীনের অংশ মনে করে (নাউজুবিল্লাহ)। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আয়াত বা হাদীসের অপব্যাখ্যা করে কুসংস্কার গুলোকে সওয়াবের কাজ বানানোর চেষ্টা করে। উল্টো যারা এই সমস্ত বিশ্বাসের বিরুদ্ধে কথা বলে তাদেরকে দ্বীন বিরোধী আখ্যা দেয়। শরীয়তের ইলম আছে এমন ব্যক্তিই শুধুমাত্র এসব কুসংস্কার শনাক্ত করতে সক্ষম। সমাজে বসবাসরত অধিকাংশ মানুষই বিভিন্ন রকম কুসংস্কারের আশ্রয় নিয়ে নিজের মুক্তি কামনা করে এবং নিজের অজান্তেই শিরকে লিপ্ত হয়।

কুসংস্কার অনেকটা বিদআতের মত, খোলসটা আকর্ষণীয় দেখা গেলেও হলেও ভিতরটা খুব জঘন্য। অর্থাৎ বিদআত যেমন বাহির থেকে আকর্ষণীয় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে হারাম, ঠিক কুসংস্কারও বাহির থেকে জাঁকজমকপূর্ণ রীতি নীতিতে ভরপুর দেখায় কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঈমান বিধ্বংসী। বিদআতী কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া মানুষগুলো যেমন বুঝতে পারেনা তারা গুনাহের কাজ করছে ঠিক তেমনি কুসংস্কারের রীতি নীতিতে আচ্ছন্ন মানুষগুলোও বুঝতে পারেনা তারা কতটা অন্ধকার জগতের মধ্যে আছে। বিদাআতের মত কুসংস্কারের রীতি নীতি গুলোকেও দ্বীনিকরণ করার চেষ্টা করা হয়, আর এসব কারনেই অধিকাংশ মানুষ না জেনে সমাজের প্রচলিত কুসংস্কার গুলোকে মেনে নেয়। কুসংস্কার থেকে মুক্ত থাকার জন্য সবচেয়ে জরুরী বিষয় হচ্ছে কুসংস্কারকে চিহ্নিত করতে পারা, আর এটি সম্ভব হবে যথাযথ সঠিক ইসলামী জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে কুসংস্কারমুক্ত জীবন গড়ার তাওফীক দান করুন। আমীন।